ধেয়ে আসছে সুপারবাগ মহামারি।

ডা. কায়সার আনাম

রাজধানী ঢাকার নর্দমায় কার্বাপেনেম, কলিস্টিন রেজিস্ট্যান্ট ই. কোলাই (সুপারবাগ) পাওয়া যাচ্ছে। মেডিকেল জার্নাল ওয়েবসাইট পাবমেড এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

অন্য সবাই সেভাবে লক্ষ্য না করলেও আমরা ডাক্তাররা গত কয়েক বছর থেকেই সি.আর.ই পজিটিভ রোগীদের উপস্থিতি বেশ আতংকের সঙ্গে দেখছি।

বাংলাদেশে গবেষণামূলক জরিপ তেমন হয় না। আমার ধারণা, ঠিকভাবে গবেষণা করলে দেখা যাবে দেশের প্রায় সব আইসিইউ, এইচডিইউতেই সি.আর.ই গিজগিজ করছে। কারণ, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার।

আমেরিকাতে কয়েক বছর আগে একটা সি.আর.ই কেস পাওয়া গেল। ইন্ডিয়া থেকে যাওয়া একজন রোগীর শরীরে। সেটা নিয়ে জাতীয়ভাবে শোরগোল হয়েছিল- সব ধ্বংস হয়ে যাবে! সুপারবাগ এসে গেছে! মহামারি থেকে রক্ষা নাই! ইত্যাদি।

আর আমাদের এখানে যে ড্রেনের পানিতেও সুপারবাগ চলে এসেছে তার বেলায়। হয়তো হাসপাতালগুলোর বর্জ্য থেকেই এর উৎপত্তি।



সুপারবাগ নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ হল- এগুলো দিয়ে ইনফেকশান হলে চিকিৎসা করা খুব কঠিন। হয়তো আপনার ফুসফুসে বা প্রস্রাবে এরকম ইনফেকশান হল। প্রচলিত কোন অ্যান্টিবায়োটিকে আর কাজ হবে না।

মধ্যযুগে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশান হলে যেভাবে চিকিৎসা ছাড়াই মরতে হত, সেভাবে মরবেন। একসময় গ্রামকে গ্রাম যেভাবে এক মহামারিতে উজাড় হত, সেরকম দিন ফেরত আসতে যাচ্ছে কিনা সেটাই ভাবছিলাম।

এরকম বিপদের সময় পুরো দুনিয়ার কথা ভাবার সুযোগ থাকে না। নিজের কথা আগে ভাবতে হয়। ভয় লাগছে আমার বা আমার পরিবারের কারো সুপারবাগ ইনফেকশান হলে কী করব?

আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কিছুদিন আগেই তার এক অতি স্বজনকে হারিয়েছে সম্ভবত এই সুপারবাগ ইনফেকশনে। তাদের গোষ্ঠীসোদ্ধো ডাক্তার। কিছু করতে পারেনি।

আমরা কেউই কিছু করতে পারবো না। বৃদ্ধ মা-বাবা, কোলের শিশু চোখের সামনে দিয়ে চলে যাবে।

রাস্তার পাশের ভাতের হোটেলগুলো সব ড্রেনের ওপরে। সেখানেই ধোয়াধুয়ি চলে। শ্রমজীবী মানুষ সেখানে খায়। দেখলেই ভয় লাগে, সুপারবাগ মহামারি কি অতি সন্নিকটে?

লেখক: ডা. কায়সার আনাম, মেডিকেল অফিসার, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্স অ্যান্ড হসপিটাল।

সূত্র: মেডিভয়েস