ফিফা বিশ্বকাপ – FIFA World Cup

ফিফা বিশ্বকাপ একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা যেখানে ফিফার (FIFA বা Fédération Internationale de Football Association, উচ্চারণ: ফেদেরাসিওঁ অ্যাঁতের্নাসিওনাল্‌ দ্য ফুৎবল্‌ আসোসিয়াসিওঁ‌, অর্থ: “আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা”) সদস্য দেশগুলোর পুরুষ জাতীয় ফুটবল দল অংশ নেয়। ১৯৩০ সালে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয় এবং প্রতি চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি।

প্রতিযোগিতাটি দুটি ভাগে বিভক্ত, বাছাইপর্ব ও চূড়ান্ত পর্ব। চূড়ান্ত পর্বটি মূল বিশ্বকাপ হিসেবে পরিচিত। চুড়ান্ত পর্যায়ে কোন দল খেলবে তা নির্বাচনের জন্য অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে বাছাইপর্বে অংশ নিতে হয়। বর্তমানে মূল বিশ্বকাপের আগের তিন বছর ধরে প্রতিযোগিতার বাছাইপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় বর্তমানে ৩২টি জাতীয় দল চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেয়। আয়োজক দেশে প্রায় একমাস ধরে এই চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতা চলে। দর্শক সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বকাপ মূল পর্ব বিশ্বের বৃহত্তম অনুষ্ঠান। ফিফার হিসেব অনুযায়ী ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা দেখেছেন প্রায় ৭১ কোটি ৫১ লক্ষ দর্শক।

এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ২০টি বিশ্বকাপে মাত্র ৮টি জাতীয় দল বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে। ৫বার বিশ্বকাপ জিতে ব্রাজিল হচ্ছে বিশ্বকাপের সফলতম দল। বর্তমান শিরোপাধারী জার্মানি ও ইতালি ৪টি শিরোপা নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। অন্যান্যদের মধ্যে উরুগুয়ে (প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী) ও আর্জেন্টিনা দু’বার করে এবং ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং স্পেন একবার করে শিরোপা জিতেছে।

সর্বশেষ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রাজিলে, ২০১৪ সালের ১২ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। এই বিশ্বকাপে জার্মানি আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে পরাজিত করে শিরোপা জিতে নিয়েছিল।

১৯৯১ সাল থেকে ফিফা মহিলা বিশ্বকাপ আয়োজন শুরু করেছে। এটিও সাধারণ বিশ্বকাপের ন্যায় চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়।

বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাস

১৯০৪ সালে ফিফা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০৬ সালে ফিফা অলিম্পিক ফুটবলের মতো করে ভিন্ন একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। তবে ফিফার ইতিহাসে এই প্রতিযোগিতাকে ব্যর্থ আখ্যা দেয়া হয়।

১৯২৮ সালে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৩০ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ পা দেয়া দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে (১৯২৪ ও ১৯২৮) ফিফা তাদের ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ হিসেবে নির্বাচন করে।



বিশ্বকাপ ট্রফি

১৯৩০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিজয়ী দলকে জুলে রিমে ট্রফি প্রদান করা হত। জনসাধারণের কাছে এটি শুধু বিশ্বকাপ বা Coupe du Monde নামেই বেশি পরিচিত ছিল, তবে ১৯৪৬ সালে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজনকারী ফিফা প্রেসিডেন্ট জুলে রিমের নামে এটির নামকরণ করা হয়। ১৯৭০ সালে ব্রাজিল তৃতীয় বারের মত বিশ্বকাপ জিতলে তাদেরকে স্থায়ীভাবে ট্রফিটি দেয়া হয়। ১৯৮৩ সালে ট্রফিটি চুরি হয়ে যায় এবং পরে আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায় চোর ট্রফিটিকে গলিয়ে ফেলেছে।

১৯৭০ সালের পর আরেকটি নতুন ট্রফির যা ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি নামে পরিচিত, নকশা প্রণয়ন করা হয়। সাতটি মহাদেশ থেকে আগত বিশেষজ্ঞগণ ফিফাকে ৫৩টি মডেল প্রদর্শন করেন। শেষপর্যন্ত ইতালিয় নকশাকার সিলভিও গাজ্জানিগার তৈরীকৃত নমুনা বিশ্বকাপ ট্রফি হিসেবে গৃহীত হয়। এ নতুন ট্রফিটির উচ্চতা ৩৬ সেন্টিমিটার, ১৮-ক্যারট সোনা দিয়ে তৈরি ও ওজন ৬,১৭৫ গ্রাম। এর ভিত্তি দু’স্তরের মূল্যবান ম্যালাকাইট দিয়ে তৈরী। ভিত্তির নিচের দিকে ১৯৭৪ থেকে আজ পর্যন্ত সকল বিশ্বকাপজয়ীর নাম গ্রথিত করা আছে। গাজ্জানিগা এ ট্রফির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন: “The lines spring out from the base, rising in spirals, stretching out to receive the world. From the remarkable dynamic tensions of the compact body of the sculpture rise the figures of two athletes at the stirring moment of victory.”

এই নতুন ট্রফি বিজয়ী দেশকে স্থায়ীভাবে দেয়া হয় না। বিশ্বকাপ জয়ী দল পরবর্তী বিশকাপ পর্যন্ত ট্রফিটি তাদের কাছে রাখতে পারে। এরপর তাদেরকে সোনার প্রলেপ দেয়া বিশ্বকাপ রেপ্লিকা দেয়া হয়। আর্জেন্টিনা, জার্মানি (পশ্চিম জার্মানি হিসেবে), ইতালি ও ব্রাজিল প্রত্যেকে দ্বিতীয় ট্রফিটি দু’বার করে জিতেছে, ফ্রান্স কেবল একবার এটি জিতেছে। বিজয়ী দলের নাম বিশ্বকাপের উপরে খদাই করে লিখে দেওয়া হয়। ২০৩৮ সালে এই ট্রফিতে নতুন বিজয়ী দলের নাম লেখার মত জায়গা থাকবে না।



বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা

১৯৩৪ সালের দ্বিতীয় বিশ্বকাপে থেকে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা সীমিত রাখতে যোগ্যতা নিরূপণী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ছয়টি মহাদেশীয় এলাকার (আফ্রিকা, এশিয়া, উত্তর ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান, দক্ষিণ আমেরিকা, ওশেনিয়া, ইউরোপ) কনফেডারেশন এই প্রতিযোগিতা পরিচালনা করে। প্রতিটি বিশ্বকাপে ফিফা ঠিক করে দেয় কোন মহাদেশীয় এলাকা থেকে কতটি দল অংশ নেবে। সাধারণত কনফেডারেশনভুক্ত দলের শক্তি ও দক্ষতার উপর নির্ভর করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এখানে কনফেডারেশন সমূহের প্রভাবও এখানে একটা ফ্যাক্টর।

সাধারণত চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার তিন বছর আগেই যোগ্যতা নিরূপনী প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। এটি প্রায় দু’বছর ধরে চলে। বিভিন্ন কনফেডারেশনভেদে প্রতিযোগিতার রকম বিভিন্ন হতে পারে। সাধারণত একটি বা দুটি স্থান আন্তমহাদেশীয় দলের মধ্যে প্লে অফের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরুপ: ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ওশেনিয়া অঞ্চলের বিজয়ী ও দক্ষিণ আমেরিকার পঞ্চম স্থানের দল দুটি বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার জন্য প্লে অফ খেলেছিল। ১৯৩৮ বিশ্বকাপ থেকে স্বাগতিকরা চূড়ান্ত পর্বে সরাসরি অংশ নিচ্ছে। আগে বিগত বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলটির পরবর্তী বিশ্বকাপে অংশ নিতে বাছাই পর্ব খেলতে হত না। কিন্তু ২০০৬ সাল থেকে বিগত চ্যাম্পিয়ন দলটিকেও বাছাই পর্ব টপকে চূড়ান্ত পর্বে খেলতে হচ্ছে।

বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ

প্রথমদিকে বিশ্বকাপের আয়োজক ফিফা কংগ্রেসের সভাতে নির্ধারণ করা হত। এসব নির্বাচন ছিল চরম বিতর্কিত, কারণ ফুটবলের দুই পরাশক্তি দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপের মধ্যে জাহাজযোগে যাতায়াতে প্রায় তিন-সপ্তাহ লাগত। একারনে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপে মাত্র চারটি ইউরোপীয় দেশ অংশ নেয়। পরের দুটি বিশ্বকাপ ইউরোপে অনুষ্ঠিত হয়। এ দুটি বিশ্বকাপের দ্বিতীয়টি অর্থাৎ ১৯৩৮ ফিফা বিশ্বকাপ ফ্রান্সে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তটি বিতর্কিত হয়েছিল। অন্যান্য আমেরিকান দেশগুলো মনে করেছিল বিশ্বকাপ একবার ইউরোপ ও একবার আমেরিকা এভাবে দুটি মহাদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। একারণে আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ে উভয়েই ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপ বর্জন করে।

১৯৫৮ ফিফা বিশ্বকাপের পর থেকে আর কোন সম্ভাব্য বিতর্ক এড়াতে ফিফা ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে পালাক্রমে বিশ্বকাপ আয়োজনের একটি নকশা প্রণয়ন করে, যেটি ১৯৯৮ ফিফা বিশ্বকাপ পর্যন্ত চলেছে। ২০০২ ফিফা বিশ্বকাপ যৌথ ভাবে আয়োজন করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া, যা ছিল এশিয়া মহাদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপ। এটাই ছিল প্রথম বিশ্বকাপ যা একাধিক দেশ মিলে আয়োজন করেছিল। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো আফ্রিকা মহাদেশে (দক্ষিন আফ্রিকা) বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়।

বর্তমানে আয়োজক দেশ ফিফার নির্বাহী কমিটির ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। যে দেশ বিশ্বকাপ আয়োজন করতে ইচ্ছুক তাদের জাতীয় ফুটবল এসোসিয়েশন ফিফার কাছ থেকে “আয়োজনের নীতিমালা” সংগ্রহ করে। এই নীতিমালায় বিশ্বকাপ আয়োজনে করনীয় সকল ধাপ ও চাহিদার বিস্তারিত বিবরন আছে। এগুলো পূরনে সক্ষম হলে সেই দেশ ফিফার কাছ থেকে আয়োজক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতার কাগজপত্র সংগ্রহ করে জমা দেয়। ফিফার একটি প্রতিনিধিদল ঐ দেশ ভ্রমণ করে ফিফার চাহিদা কতটুকু পূরন হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করে একটি রিপোর্ট তৈরি করে। বর্তমানে আয়োজক নির্বাচন বিশ্বকাপের ছয় বছর পূর্বে হয়ে থাকে।



বিশ্বকাপের মূল আসর

বর্তমানে বিশ্বকাপ ফুটবলে ৩২টি জাতীয় দল মাসব্যাপী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এই প্রতিযোগিতা দু’ধাপে বিভক্ত –

  • গ্রুপ পর্যায় এবং
  • নক-আউট পর্যায়।

গ্রুপ পর্যায়ে দলগুলোকে প্রতি দলে চারটি করে আটটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। বিশ্বকাপের মূলপর্বের ছয়মাস আগে কোন গ্রুপে কে থাকবে তা নির্ধারন করে দেয়া হয়। ফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী শীর্ষ আটটি দলকে (স্বাগতিক দল-সহ) আটটি ভিন্ন গ্রুপে রাখা হয়। প্রতি গ্রুপের বাকি তিনটি দলের স্থান বিভিন্ন এলাকার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট করা হয়। পরে ঐ এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন দলের মধ্যে লটারি করে চূড়ান্ত গ্রুপ নির্ধারণ করা হয়। ১৯৯৮ থেকে নিয়ম করা হয় একই গ্রুপে দু’টির বেশি ইউরোপীয় দল বা অন্য কনফেডারেশনের একটির বেশি দল থাকতে পারবে না।

প্রতি গ্রুপে রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে একটি দল বাকী তিনটি দলের সাথে তিনটি খেলা খেলে। গ্রুপের তিনটি খেলার পর শীর্ষ দু’টি দল পরের ধাপে উত্তীর্ণ হয়। গ্রুপের মধ্যে দলের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য পয়েন্ট ব্যবস্থা গৃহীত হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে একটি দলের জয়ের জন্য তিন পয়েন্ট ও ড্রয়ের জন্য এক পয়েন্ট দেয়া হচ্ছে। এর আগে প্রতি খেলায় জয়ে জন্য দুই পয়েন্ট ছিল। যদি দুটি দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যায় তাহলে প্রথমে গোল ব্যবধান, এরপর গোল সংখ্যা, এরপর দু’টি দলের খেলার ফলাফলের উপর নির্ভর করে অবস্থান নির্ণয় করা হয়। এতেও যদি অবস্থান না নির্ণয় করা যায় তাহলে লটারির ব্যবস্থা করা হয়।

এরপরে শুরু হয় নক আউট পর্ব। নক আউট পর্যায়ে কেউ হারলেই প্রতিযোগিতা থেকে বাদ হয়ে যায়। এতে দু’টি দল এক-লেগের খেলা খেলে। নির্ধারিত নব্বুই মিনিটে খেলা না শেষ হলে “অতিরিক্ত সময়” ও পরে “পেনল্টি শুটআউট” এর মাধ্যমে খেলার জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। এই নিয়ম গ্রুপ পর্যায়ের পর দ্বিতীয় পর্যায় থেকেই চালু হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে এক গ্রুপের বিজয়ী অন্য গ্রুপের রানার্স-আপের সাথে খেলে থাকে। এরপর কোয়ার্টার-ফাইনাল, সেমি-ফাইনাল, তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ও ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

বিভিন্ন বিশ্বকাপে প্রতিযোগিতার যে ধরন ব্যবহৃত হয়েছে তার একটি তালিকা নিচে দেয়া হলো:

  • ১৯৩০: গ্রুপ পর্যায়, চার গ্রুপের চার শীর্ষদল সরাসরি সেমিফাইনালে অংশ নেয়। (গ্রুপ বিজয়ী; কোন তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলা অনুষ্ঠিত হয়নি)
  • ১৯৩৪–১৯৩৮: নকআউট প্রতিযোগিতা; কেবল এই বিশ্বকাপেই গ্রুপ পর্যায় ছিল না
  • ১৯৫০: প্রথম গ্রুপ পর্যায়, এরপর আরেকটি গ্রুপ পর্যায় যাতে ৪টি দল অংশ নেয়। (গ্রুপ বিজয়ী); কেবল এই বিশ্বকাপেই কোন অফিসিয়াল ফাইনাল খেলা ছিল না
  • ১৯৫৪–১৯৭০: গ্রুপ পর্যায়, এরপর নকআউট পর্যায় যাতে ৮টি দল অংশ নেয়। (গ্রুপ বিজয়ী ও রানার্স-আপ)
  • ১৯৭৪–১৯৭৮: প্রথম গ্রুপ পর্যায়, এরপর আরেকটি গ্রুপ পর্যায় যাতে দুটি গ্রুপে ৮টি দল অংশ নেয়। (প্রথম গ্রুপের বিজয়ী ও রানার্স-আপ), এরপর ফাইনাল (দ্বিতীয় গ্রুপ পর্যায়ের বিজয়ী ফাইনালে খেলে; দ্বিতীয় গ্রুপ পর্যায়ে রানার্স-আপ দল দু’টি তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলা খেলে)
  • ১৯৮২: প্রথম গ্রুপ পর্যায়, এরপর দ্বিতীয় গ্রুপ পর্যায় যাতে ১২টি দল অংশ নেয় (প্রথম পর্যায়ের বিজয়ী ও রানার্স-আপ), এরপর নকআউট পর্যায় যাতে ৪টি দল অংশ নেয় (দ্বিতীয় পর্যায়ের বিজয়ী)
  • ১৯৮৬–১৯৯৪: গ্রুপ পর্যায়, এরপর নকআউট পর্যায় যাতে ১৬টি দল অংশ নেয় (গ্রুপ বিজয়ী, রানার্স-আপ ও চারটি শ্রেষ্ঠ তৃতীয়-স্থানের দল)
  • ১৯৯৮–বর্তমান: গ্রুপ পর্যায়, এরপর নকআউট পর্যায় যাতে ১৬টি দল অংশ নেয় (গ্রুপ বিজয়ী ও রানার্স-আপ)

বিশ্বকাপ বিজয়ীদের কথা

এ পর্যন্ত ২০টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে সবমিলিয়ে মোট ৭৮টি দেশ কমপক্ষে একবার হলেও বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলেছে। এর মধ্যে ফাইনালে উঠেছে কেবল ১১টি এবং ফাইনালে জিতেছে মাত্র ৮টি দেশ। যে সব দেশ বিশ্বকাপ জিতেছে তারা নিজেদের খেলার পোশাকে তারকা ব্যবহার করতে পারে। প্রতিটি তারকা একটি বিশ্বকাপ শিরোপা নির্দেশ করে।

এ পর্যন্ত পাঁচবার শিরোপা (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪, ২০০২) জিতে ব্রাজিল বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দল এবং তারাই একমাত্র দল যারা এপর্যন্ত অনুষ্ঠিত সবগুলো বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে। চারবার করে শিরোপা জিতেইতালি(১৯৩৪*, ১৯৩৮, ১৯৮২, ২০০৬) ও জার্মানী(১৯৫৪, ১৯৭৪*, ১৯৯০, ২০১৪) দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আর্জেন্টিনা (১৯৭৮*, ১৯৮৬) ও উরুগুয়ে (১৯৩০*, ১৯৫০) দুইবার করে বিশ্বকাপ জিতেছে। একবার করে শিরোপা জিতেছে ফ্রান্স (১৯৯৮*), ইংল্যান্ড (১৯৬৬*) ও স্পেন (২০১০)। * চিহ্ন দ্বারা স্বাগতিক দেশ বোঝানো হয়েছে।

পরপর দুটি বিশ্বকাপ জয় করতে পেরেছে কেবল ব্রাজিল ও ইতালি, এবং প্রত্যেকেই তাদের প্রথম দুটি বিশ্বকাপ এভাবেই জিতেছে (ইতালি: ১৯৩৪ ও ১৯৩৮; ব্রাজিল: ১৯৫৮ ও ১৯৬২)। ১৯৭০ ও ১৯৯৪ সালে ব্রাজিল ও ইতালি যখন ফাইনালে মোকাবিলা করেছে, তখন উভয় দলের সামনে যথাক্রমে প্রথম দল হিসেবে তৃতীয় শিরোপা ও প্রথম দল হিসেবে চতুর্থ শিরোপা লাভের দরজা খোলা ছিল। দুটি ফাইনালেই ব্রাজিল ইতালিকে হারিয়ে দেয় এবং ২০০২ সালে রেকর্ড পঞ্চম শিরোপা জেতে। ব্রাজিল সর্বোচ্চ চারটি মহাদেশে আয়োজিত বিশ্বকাপে শিরোপা জিতেছে (ইউরোপ: ১৯৫৮; দক্ষিণ আমেরিকা: ১৯৬২; উত্তর আমেরিকা: ১৯৭০ ও ১৯৯৪; এশিয়া: ২০০২)।

যে সব দল পরপর দুটি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে তারা হচ্ছে ইতালি, ব্রাজিল, পশ্চিম জার্মানি, আর্জেন্টিনা, এবং কখনো শিরোপা না জেতা নেদারল্যান্ড। পরপর তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলা দল হচ্ছে ব্রাজিল (১৯৯৪, ১৯৯৮, ২০০২) ও পশ্চিম জার্মানি (১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯০)। ব্রাজিল এই তিনটির দুটিতে জিতেছে (১৯৯৪, ২০০২) কিন্তু পশ্চিম জার্মানি কেবল একটিতে জিতেছে। আঠারোটি ফাইনালের মধ্যে কেবল দুবার একই প্রতিপক্ষ ফাইনালে খেলেছে। ব্রাজিল ও ইতালি খেলেছে ১৯৭০ ও ১৯৯৪ সালে, এবং পশ্চিম জার্মানি ও আর্জেন্টিনা খেলেছে ১৯৮৬ ও ১৯৯০ সালে (পশ্চিম জার্মানি ও আর্জেন্টিনাই কেবল পরপর দুটি ফাইনালে পরস্পরের মোকাবিলা করেছে)। প্রতিটি ফাইনাল খেলায় ব্রাজিল, ইতালি, (পশ্চিম) জার্মানি, ও আর্জেন্টিনার একটি দল অন্তত অংশ নিয়েছিল।

নীচে ২০টি বিশ্বকাপের বিজয়ী ও রানার্সআপ দলের তালিকা দেওয়া হলো-

বছর আয়োজক বিজয়ী ফলাফল দ্বিতীয় স্থান
১৯৩০ উরুগুয়ে উরুগুয়ে ৪–২ আর্জেন্টিনা
১৯৩৪ ইতালি ইতালি ২–১ চেকোস্লোভাকিয়া
১৯৩৮  ফ্রান্স ইতালি ৪–২ হাঙ্গেরি
১৯৫০  ব্রাজিল উরুগুয়ে ব্রাজিল
১৯৫৪  সুইজারল্যান্ড পশ্চিম জার্মানি ৩–২ হাঙ্গেরি
১৯৫৮  সুইডেন ব্রাজিল ৫–২ সুইডেন
১৯৬২  চিলি ব্রাজিল ৩–১ চেকোস্লোভাকিয়া
১৯৬৬  ইংল্যান্ড ইংল্যান্ড ৪–২ পশ্চিম জার্মানি
১৯৭০  মেক্সিকো ব্রাজিল ৪–১ ইতালি
১৯৭৪  জার্মানি পশ্চিম জার্মানি ২–১ নেদারল্যান্ড
১৯৭৮  আর্জেন্টিনা আর্জেন্টিনা ৩–১ নেদারল্যান্ড
১৯৮২  স্পেন ইতালি ৩–১ পশ্চিম জার্মানি
১৯৮৬  মেক্সিকো আর্জেন্টিনা ৩–২ পশ্চিম জার্মানি
১৯৯০  ইতালি পশ্চিম জার্মানি ১–০ আর্জেন্টিনা
১৯৯৪  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিল ০–০ (৩-২) ইতালি
১৯৯৮  ফ্রান্স ফ্রান্স ৩–০ ব্রাজিল
২০০২  দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ব্রাজিল ২–০ জার্মানি
২০০৬  জার্মানি ইতালি ১–১ (৫-৩) ফ্রান্স
২০১০  দক্ষিণ আফ্রিকা স্পেন ১–০ নেদারল্যান্ডস
২০১৪  ব্রাজিল জার্মানি ১-০ আর্জেন্টিনা